multikulti

মানসিক চাপ(depression) সম্বন্ধে বোঝা

এই তথ্যপত্রে মানসিক চাপের লক্ষনগুলি এবং এর জন্য বিভিন্ন ধরনের যে সকল চিকিত্সা পাওয়া যায়, সেগুলির বর্ননা করা হয়েছে । এই তথ্যপত্রে, অসুস্থ ব্যক্তিরা, কি ভাবে নিজেদের এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিরা এবং বন্ধুবান্ধবরাও তাদের সাহায্য করতে পারেন, সে বিষয়েও বলা হয়েছে । এতে আরও বলা হয়েছে যে, আপনি এ সম্বন্ধে আরও তথ্য এবং উপদেশ কোনখান থেকে পেতে পারেন । মানসিক চাপ বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবান্বিত করে এবং এর বহুরকমের মানসিক এবং শারীরিক লক্ষন থাকতে পারে । অপনি যদি মানসিক চাপগ্রস্থ হন তাহলে মনে করতে পারেন যে কিছুই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না । কিন্তু আসলে আপনি অনেক কিছুই করতে পারেন, যেগুলি এই অবস্থার ব্যতিক্রম ঘটাতে পারে । সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল যে আপনি এই সম্বন্ধে কিছু করবেন সেটা ঠিক করা । বেশীরভাগ ব্যক্তিই এই মানসিক চাপ থেকে সুস্থ হয় উঠেন এবং এমন কি কিছু কিছু ব্যক্তি এই অবস্থাকে একটা উপকারী অভিজ্ঞতা বলেও মনে করেন । তারা এটা মনে করেন এই কারনে যে এই মানসিক চাপের ফলে তারা তাদের জীবন যে ভাবে চলছিল সেটা বিচার করে দেখেছেন এবং জীবনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন ।

মানসিক চাপ(depression)কি?

মানসিক চাপ হল চিকিত্সা শাস্ত্রের একটা শব্দ যেটা বহুরকমের মানসিক চাপের ক্ষেত্রেই প্রযোয্য । একেবারে অল্পধরনের মানসিক চাপ ফলে মন খারাপ হতে পারে, তবে এর ফলে আপনার সাধারন জীবন যাপন বন্ধ হয় না কিন্তু সব কিছু করা যেন কঠিন হয়ে পড়ে এবং নিজেকে অযোগ্য বলে মনে হয় । সবচাইতে বেশী ধরনের মানসিক চাপ জীবন সংশয়ে গিয়ে দাড়াতে পারে । আপনার মনে আত্মহত্যা করার বাসনা জাগতে পারে অথবা বেঁচে থাকার ইচ্ছা চলে যেতে পারে ।

উদ্বেগ(Anxiety)

যে সকল ব্যক্তি মানসিক চাপের মধ্যে আছেন তারা হামেশাই উদ্বেগে ভোগেন । যখনই আপনি ভয় পান, সেই ভয় বাস্তবিক অথবা কাল্পনিক হোক না কেন, তখনই আপনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন । এই উদ্বেগ শারীরিক লক্ষনের ভিতর দিয়েও প্রকাশিত হতে পারে, যেমন: মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা, বেশী ঘাম হওয়া এবং মাথা ঘোরা । কোন উদ্বিগ্ন ব্যক্তির মন হয়ত বারে বারে একই চিন্তাতে ব্যস্ত থাকতে পারে । এর ফলে কোন কিছুতেই মন দেওয়া, আরাম করা অথবা ঘুমানো কঠিন হতে পারে । দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের উদ্বেগে ভুগলে, ý সেটা প্রচন্ড শারীরিক দুর্বলতা এবং খারাপ স্বাস্থে্যর কারণ হতে পারে ।

ৠতু অনুযায়ী প্রভাবান্বিত ব্যধি(Seasonal Affective Disorder - SAD)

শীতের মাসগুলিতে দিনের আলোর অভাবের জন্য এই ধরনের মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়, যার ফলে কিছু কিছু লোকের আরও বেশী মানসিক চাপে ভুগবার আশঙ্কা থেকে থাকে ।

সন্তান জন্মাবার পরের মানসিক চাপ(Postnatal depression)

কোন কোন মায়েরা তাদের সন্তানের জন্ম হবার পর মানসিক চাপে ভুগে থাকেন । এটা মনে করা হয় যে এই মানসিক চাপের কারণ হল শরীরে হরমোনের মাত্রার পরিবর্ত্তন ।

উন্মাদকর মানসিক চাপ(Manic depression)

এটার ফলে কোন কোন ব্যক্তি প্রচন্ড মানসিক চাপ এবং উন্মাদনায় ভুগতে পারেন । উন্মাদনা হচ্ছে প্রচন্ড উত্তেজক মানসিক অবস্থা এবং অনিয়ন্ত্রিত আচার আচরণ ।

মানসিক চাপের লক্ষন কি?

মানসিক চাপ বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবান্বিত করে । এর বহুরকমের মানসিক এবং শারীরিক লক্ষন থাকতে পারে ।

যে সকল ব্যক্তিরা মানসিক চাপে ভুগছেন তারা হয়ত:

কি কারণে মানসিক চাপ হয়

মানসিক চাপ হওয়ার কোন বিশেষ একটা কারণ নেই; বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপ হতে পারে । বহু ক্ষেত্রেই মানুষ জীবনে যখন কঠিন সমস্যার সন্মুখীন হন তখনই মানসিক চাপ আরম্ভ হয়, বিশেষতঃ প্রথমবার । আপনার বাল্যকালে কি হয়েছিল সেটা আপনার বর্তমানে আপনার জীবন এবং আপনার নিজের সম্বন্ধে কি রকম বোধ করেন তার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে

গভীর আঘাত(trauma), যেমন: শারীরিক আক্রমন অথবা ধর্ষণের ফলে মানসিক চাপ আরম্ভ হতে পারে । মানুষ যখন শোকে আচ্ছন্ন থাকেন তখনও এটা হতে পারে । যে কোন নেতিবাচক অভিজ্ঞতা মানসিক চাপের কারণ নয় । এই অভিজ্ঞতার ফলে আপনি কি ধরনের আচরণ করে থাকেন সেটাই হল আসল কারণ । যদি আপনার অনুভুতিগুলিকে ব্যক্ত বা সেগুলি সম্বন্ধে অনুসন্ধান না করেন, তাহলে এই নেতিবাচক অভিজ্ঞতা সম্ভবতঃ মানসিক চাপের কারণ হতে পারে ।

শারীরিক অসুস্থতাও মানসিক চাপের কারণ হতে পারে । খারাপ খাদ্য, অনুপযুক্ত স্বাস্থ্য এবং অসুস্থতা, যেমন ইনফ্লুয়েনজা, এই সবগুলিতেই আপনি মানসিক চাপগ্রস্ত বোধ করতে পারেন । আনন্দ উপভোগ করার জন্য নিয়মিত যে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা হয় সেটাও মানসিক চাপের কারণ হতে পারে ।

কি কি ধরনের চিকিত্সা পাওয়া যায়?

যখন মানসিক চাপের জন্য সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করা হয় তখন সেটা উল্ডা মনে হয় । যখন এমনিতেই আপনার পক্ষে কোন বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন, তখন নানারকম চিকিত্সার মধ্যে একটা পছন্দ করা একটা বোঝার মত মনে হয় । মানসিক চাপের জন্য নানারকমের চিকিত্সা আছে তবে এর মধ্যে কতকগুলি চিকিত্সা পাওয়ার ব্যবস্থা সীমাবদ্ব । এটা নির্ভর করে আপনি কোনখানে বাস করেন । যেমন: আপনি যদি লন্ডন অথবা দক্ষিণ-পূর্ব্ব ইংল্যান্ডে বাস করেন তাহলে কাউন্সেলিং পাওয়া সহজসাধ্য । কিন্তু আপনি যদি উত্তর ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলে বাস করেন তাহলে এটা পাওয়া কঠিন ।

যে সকল ব্যক্তিরা মানসিক চাপে ভুগছেন তারা নানারকমের চিকিত্সার ভিতর থেকে যেটা তাদের পক্ষে উপযুক্ত, সেরকম একটা বা মিলিত চিকিত্সা পছন্দ করতে সক্ষম হওয়া উচিত্ । বাস্তবে বেশীরভাগ ব্যক্তিরাই যারা ডাক্তারের সার্জারীতে যান তাদের মানসিক চাপ কমানোর প্রাথমিক ধাপ হিসাবে ওষুধ খেতে দেওয়া হতে পারে । অনেক ব্যক্তির জন্য একই সঙ্গে কথা বলার চিকিত্সা এবং ওষুধ খাওয়া সর্বাপেক্ষা ফলপ্রসু হতে পারে ।

কাউন্সেলিং

কাউন্সেলিং হচ্ছে অন্যদের কথা কি ভাবে শুনতে হয়, এই ব্যপারে শিক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা । এতে আপনি নিজে কি রকম বোধ করছেন সেটা প্রকাশ করতে এবং এর ফলে আপনি কি ভাবে নিজের সমস্যা দূর করে নিজেকে ভাল করে তুলতে পারেন, সেই পথ খুজে পেতে সাহায্য করে । যে ব্যক্তি তার হৃদয় দিয়ে আপনার কথা শুনতে পারেন এবং মেনে নিতে পারেন তার সঙ্গে কথা বলতে পারলে, তিনি আপনার যে সকল অনুভুতিগুলি এবং ঘটনাগুলি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে সেগুলিকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন । কাউন্সিলার হয়ত আপনাকে আপনার অনুভূতিগুলি, চিন্তাধারাগুলি এবং ব্যবহারগুলি আরও ভাল করে বুঝতে সাহায্য করতে পারবেন । আপনার ডাক্তারের সার্জারীতে হয়ত কাউন্সিলার থাকতে পারেন অথবা আপনার ডাক্তার হয়ত আপনাকে ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসের কোন কাউন্সিলারের কাছে পাঠাতে পারেন । অনেকগুলি স্বয়ংসেবী(voluntary) সংস্থা অথবা বেসরকারী(private) সংস্থা থেকেও কাউন্সেলিং পাওয়া যেতে পারে ।

মনসমীক্ষন দ্বারা রোগ নিরাময়(psychotherapy)



মনসমীক্ষন দ্বারা রোগ নিরাময় হচ্ছে কথা বলার চিকিত্সা, যার দ্বারা আপনার যে সমস্যাগুলি আছে সেগুলিকে আপনি কি ভাবে সামলাতে পারবেন সেই পথ খুজে বের করতে সাহায্য করতে পারে । এর লক্ষ্য হল যে আপনাকে আরও সন্তোষজনক এবং তত্পরভাবে জীবন কাটানোর সুযোগ দেওয়া । মনসমীক্ষনের চিকিত্সার পদ্ধতি কাউন্সেলিংয়ের থেকেও আরও গভীর । আপনাকে হয়ত আপনার অতীত জীবনে কি ঘটেছিল সেটা বের করতে উত্সাহিত করা হবে, বিশেষ করে আপনার বাল্যকাল এবং জীবনে কিছু কিছু লোকের সঙ্গে আপনার কি সম্পর্ক ছিল সেটা । কিছু কিছু সল্পকালীন মনসমীক্ষনের চিকিত্সা ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসে পাওয়া যায় । কিন্তু বেশীরভাগ মনসমীক্ষন চিকিত্সকেরাই বেসরকারী সংস্থায় কাজ করেন ।

পূর্বজ্ঞানমূলক আচরনের চিকিত্সা(Cognitive behaviour therapy)

পূর্বজ্ঞানমূলক আচরনের চিকিত্সা হচ্ছে একরকম কথাবলার চিকিত্সা, যেটা আপনার সমস্যাগুলি বুঝতে এবং কি ভাবে এই অনুভূতিমূলক সমস্যাগুলিকে অতিক্রম করতে পারবেন সে বিষয়ে সাহায্য করে । চিকিত্সক আপনাকে আপনার চিন্তাধারার মধ্যে যোগাযোগগুলি, কি ভাবে সেই চিন্তাধারাগুলি আপনার উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং এর ফলে আপনি কি রকম ব্যবহার করেন, সেগুলি আপনার নিজেকে বুঝতে সমর্থ করেন । পূর্বজ্ঞানমূলক আচরনের চিকিত্সা আপনাকে, আপনার ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবেন এবং আপনার অনুভুতি এংব ব্যবহারের মূলে কি সমস্যা আছে সেটা পরীক্ষা করতে সক্ষম করবেন । পূর্বজ্ঞানমূলক আচরনের চিকিত্সা সাধারনতঃ মানসিক চিকিত্সকেরাই ব্যবহার করে থাকেন, সেইজন্য আপনার ডাক্তারকে এই চিকিত্সার জন্য আপনাকে মানসিক চিকিত্সকের কাছে পাঠাতে হবে ।

স্বয়ংসেবী দলগুলি

(Self-help groups)

স্বয়ংসেবী দলগুলির কাজের মূল নীতি হল যে, যে সকল ব্যক্তি মানসিক চাপে ভুগছেন তারা অন্যান্য যে সকল ব্যক্তিরা একই রোগে ভুগছেন, তাদের সঙ্গে একসঙ্গে হলে সেটা সাহায্যকারী হতে পারে এবং কি ভাবে অন্যান্য ব্যক্তিরা তাদের এই সমস্যা সামলে নিয়েছেন সেটাও তারা জানতে পারবেন । আপনি এটা বুঝতে পারবেন যে আপনি অন্যদের এবং অন্যরা আপনাকে সাহায্য করতে পারেন । প্রায়শঃই, যে সকল ব্যক্তিরা নিজেরা মানসিক চাপে ভুগেছেন তারাই এই দলগুলি চালান ।

ওষুধ খাওয়া

(Medication)



সাধারনভাবে মানসিক চাপ কমানোর জন্য ওষুধ খেতে দেওয়া হয় । এই ওষুধগুলি মগজের রসায়নের উপর প্রভাব বিস্তার করে যাতে আপনার মানসিক অবস্থার পরিবর্ত্তন হয় । এই ওষুধগুলি মানসিক চাপকে নিরাময় করতে পারে না কিন্তু এর উপশম করতে পারে এবং এর ফলে আপনি হয়ত এটা মনে করতে পারেন যে আপনি আপনার মানসিক চাপ সম্বন্ধে কি করবেন সে ব্যবস্থা নিতে পারবেন । এই ওষুধগুলি সকলের ক্ষেত্রে কাজ করে না এবং প্রায়শঃই এগুলির পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া(side effects) হতে পারে । সাধারনত এই ওষুধগুলির কাজ করতে দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে । এই ওষুধগুলি অনেক রকমের হয় । এর মধ্যে অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে খেলে বিপদজনক হতে পারে এবং যখন আপনি এই ওষুধগুলি খাওয়া বন্ধ করবেন তখন মানসিক চাপ হয়ত আবার ফিরে আসতে পারে ।

হাসপাতালে ভর্তিহওয়া(hospital admission)



আপনি যদি খুব নেশী মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তাহলে আপনার হয়ত থাকবার জায়গার এবং নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালে থাকতে হতে পারে । এটা আপনার মানসিক রোগের চিকিত্সক, আপনাকে যে বিভিন্ন ধরনের চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে সেগুলি কি ভাবে কাজ করছে তার উপর দৃষ্টি রাখতে পারবেন এবং যখন দেখবেন যে আপনার চারপাশে অন্যান্য ব্যক্তিরা আপনাকে দেখাশোনা করছে, সেটা হয়ত আপনার পক্ষে স্বান্তনামূলক হতে পারে । তবে হাসপাতালের ওয়ার্ডে আরও অন্যান্য রুগীদের মাঝখানে নিজের মত করে থাকতে পারবেন না, আপনাকে নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে এবং অন্যান্য রুগীদের ব্যবহারে আপনার মেজাজ মন খারাপ হতে পারে । সেগুলি আপনাকে হয়ত কষ্ট দিতে পারে । সাধারনত ডাক্তাররা রুগীদের হাসপাতালে রাখতে চান না, কিন্তু কিছু কিছু রুগী যারা নিজেদের অথবা অন্যদের ক্ষতি করবে বলে মনে করা হয় তাদের জোর করে হাসপাতালে রাখা হয় ।

সামাজিক যত্ন

(Community care)



আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে প্রচন্ড মানসিক চাপে ভুগে থাকেন এবং আপনার স্বাধীনভাবে সমাজে বাস করার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন, তাহলে বেশ কয়েক ধরনের সেবা আপনি পেতে পারেন । ‘কেয়ার প্রোগ্রাম এপ্রোচ’ আপনাকে মূল্যায়ন করে, সোসাল সার্ভিস এবং স্বাস্থ্য দফতর যাতে আপনার জন্য যথাযথ সেবা প্রদান করতে পারে সেটা নিশ্চিত করে । একজন কেয়ার কো-অরডিনেটারকে আপনার জন্য নিযুক্ত করা হতে পারে, যিনি যে সকল সেবা আপনাকে প্রদান করা হচ্ছে সেগুলির সমন্বয় সাধন করতে পারনে । কমিউনিটি মেন্টাল হেল্থ টিম এবং কমিউনিটি সাইক্রিয়াটিক নার্স যে সকল ব্যক্তিরা নিজেদের বাড়ীতে থাকেন তাদের সহায়তা করতে পারেন ।

ইলেকট্রো-কনভালসিভ চিকিত্সা

{Electro-convulsive therapy (ECT)}





এই চিকিত্সা সাধারনত যে সকল ব্যক্তিরা, যারা প্রচন্ড রকমের মানসিক চাপের মধ্যে আছেন এবং তাদের উপর ওষুধ কাজ করছে না, তাদেরকেই এইভাবে চিকিত্সা করা হয় । আপনাকে প্রথমে অচেতন করে, আপনার মগজের ভিতর দিয়ে ইলেকট্রিক কারেন্ট চালানো হবে । এর ফলে আপনার শরীর মৃগীরুগীদের মত কাঁপবে । এটা একটা বিতর্কমূলক চিকিত্সা এবং এর ফলে অন্যান্য কঠিন লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন স্মৃতিশক্তি হারানো ।

আমি নিজেকে সাহায্য করার জন্য কি করতে পারি?



যখন আপনি মানসিক চাপ কি ভাবে কমাবেন সে কথা চিন্তা করছেন, তখন এর একটা উল্লেখযোগ্য লক্ষণ সম্বন্ধে আপনার সচেতন থাকা উচিত । মানসিক চাপ নিজেই নিজেকে বাড়িয়ে তুলতে পারে । অন্যভাবে বলা যায় যে আপনি মানসিক চাপের মধ্যে আছেন বলে আপনার মানসিক চাপ আরও বেড়ে যেতে পারে । সেই সময় নেতিবাচক চিন্তাগুলি স্বাভাবিকভাবেই মনের মধ্যে আসে এবং এগুলিকে আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে । কি কারণে মানসিক চাপ হয়েছিল সেটার থেকে আপনি যে মানসিক চাপের মধ্যে আছেন সেটাই বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে । একটা উল্লেখযোগ্য জিনিষ মনে রাখা দরকার যে জীবনের সমস্যাগুলির খুব তাড়াতাড়ি বা সহজে সমাধান হয় না । এইগুলির সমাধানের জন্য সময়, শক্তি এবং এর পেছনে কাজ করার প্রয়োজন হয় । আপনি যখন মানসিক চাপের মধ্যে আছেন তখন আপনি হয়ত সবল বোধ করেন না অথবা আপনার কাজ করার ইচ্ছা থাকে না । তবে আপনি যদি আপনার চিকিত্সার ব্যপারে সক্রিয় ভূমিকা নেন, যেমন চিকিত্সা গ্রহনে অংশ নেওয়া, তাহলে সেটা আপনার অবস্থাকে সাহায্য করবে ।

এটা প্রয়োজনীয় যে মানসিক চাপ আপনাকে যে ধরে বা বেধে বেখেছে সেটা ভেঙ্গে ফেলা । আপনাকে নেতিবাচক চিন্তাধারাগুলিকে দূর করতে হবে । চেষ্ট করুন এবং স্বীকার করে নিন যে আপনি নেতিবাচক চিন্তা করছেন এবং কাজকর্ম বা অন্যান্যভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখার দ্বারা এই চিন্তাগুলিকে দূর করার চেষ্টা করুন । যদিও আপনি এটা পছন্দ করবেন না, তবুও এমন কাজ করার চেষ্টা করুন, যেগুলি আপনার মনকে ব্যস্ত রাখে । শারীরিক কাজকর্ম বা ব্যয়াম করার জন্য নিজেকে উত্সাহিত করুন । এতে আপনার চিকিত্সার পক্ষে ভাল হবে । খেলাধূলা করা,দৌড়ানো, নাচা, সাইকেল চালানো, এমন কি তাড়াতাড়ি হাঁটাও আপনার মগজের ‘এনডরফিন’ নামক রসায়নগুলিকে উত্তেজিত করতে পারে । এটা আপনাকে ভাল বোধ করতে সাহায্য করে ।

যেগুলি করলে আপনি নিজে ভাল বোধ করেন সেগুলি আপনার করা প্রয়োজন । নিজের প্রতি দয়াপরবশ হোন এবং সেইভাবে নিজের প্রতি ব্যবহার করুন । শরীরের দিক থেকে আপনার নিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন । তামাক/সিগারেট, মদ এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে শরীরের অপব্যবহার করবেন না । আপনার নিজের চেহারার প্রতি নজর দিন এবং নিজের মনোরঞ্জন করুন ।

বিকল্প এবং পরিপূরক চিকিত্সা

(Alternative and complementary therapies)



অনেক রকমের বিকল্প এবং সহযোগীতামূলক চিকিত্সা আছে । সেগুলি হয়ত মানসিক চাপের চিকিত্সার সহায়ক হতে পারে ।

ভেজষ(herbal) ওষুধ যেমন হাইপেরিকাম (সেন্ট জনস ওয়ার্ট) আপনার মনকে ভাল করতে পারে এবং এই ওষুধ খুব জনপ্রিয় । তবে মনে রাখবেন যে আপনি যদি অন্য কোন ওষুধ ব্যবহার করছেন, তাহলে সেন্ট জনস ওয়ার্ট খাওয়া নিরাপদ হবে না । এই বিষয়ে আরও জানার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের ফোন নম্বরে ফোন করুন । অন্যান্য চিকিত্সা, যেমন আকুপাংচার এবং হোমিওপ্যাথিও মানসিক চাপগ্রস্থ রুগীদের চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে । বহু পরিপূরক চিকিত্সাগুলি শরীর এবং মনকে আলাদা করে দেখে না । তারা আপনাকে একজন সম্পূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে দেখে, কেবলমাত্র অসুখের লক্ষনগুলির চিকিত্সা করে না ।

বন্ধুবান্ধবেরা এবং আত্মীয় স্বজনেরা কি ভাবে সাহায্য করতে পারেন



মানসিক চাপগ্রস্ত ব্যক্তিরা প্রায়শঃই বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনেরা যারা কাছাকাছি আছেন, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়ার পরিবর্ত্তে, নিজেদেরকে তাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন । কিন্তু এই সময়েই তাদের আপনাদের সাহায্য এবং সহযোগীতার সবচাইতে বেশী প্রয়োজন । সম্ভবতঃ বন্ধুবান্ধবেরা এবং আত্মীয় স্বজনেরা সবচাইতে উল্লেখযোগ্য কাজ করতে পারেন যে অসুস্থ ব্যক্তিকে উপযুক্ত চিকিত্সা নেবার জন্য উত্সাহিত করতে পারেন । মানসিক চাপের আসল লক্ষণ হল নিজেকে সাহয্যহীন, আশাহীন এবং মূল্যহীন বলে মনে করা এবং এর ফলে অসুস্থ ব্যক্তি হয়ত সাহায্য খুজবেন না

একজন মানসিক চাপগ্রস্ত ব্যক্তিকে, বন্ধুবান্ধবেরা এবং আত্মীয় স্বজনেরা সাহায্য প্রদান করার ফলে, তাদের সঙ্গে আরও নিকট এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ পাবেন । তবে এটা কঠিন হতে পারে এবং একেক সময় আপনি হয়ত হতাশ হয়ে পড়তে পারেন এবং আপনি যদি নিজেকে ভাল করে দেখাশোনা না করেন তাহলে, আপনি নিজেই মানসিক চাপগ্রস্ত বোধ করতে পারেন । মানসিক চাপগ্রস্ত ব্যক্তিদের সবচাইতে বেশী প্রয়োজন হল যে কেউ তাদের যত্ন নেয় । আপনি তাদের কথা শুনে, তাদের প্রতি স্নেহপ্রবণ হয়ে, তাদের মূল্য দিয়ে অথবা কেবলমাত্র তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে এটা তাদের দেখাতে পারেন যে আপনি তাদের ভালবাসেন । তারা কি রকম বোধ করছেন এবং তারা ভাল হওয়ার জন্য কি কি পরিবর্তন করতে হবে, সেই সম্বন্ধে উত্সাহিত করে আপনি তাদের সাহায্য করতে পারেন ।

আপনি যে ব্যক্তিকে সহায়তা করছেন তিনি যদি কঠিন মানসিক চাপগ্রস্ত হন, তাহলে আপনি তাদের জন্য কতটা করতে পারবেন, সেই ব্যপারে আপনাকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে । যেমন, তারা তাদের শারীরিক যত্ন নিচ্ছেন না, আপনি যদি পারেন তবে কি তাদের জন্য বাজার করে আনবেন, রান্না করবেন, বাড়ীঘর পরিস্কার করবেন? অথবা আপনি তাদের নিজেদেরকে এই কাজগুলি করতে উত্সাহিত করবেন । এই অবস্থার জন্য কোন সহজ পথ নেই । আপনি যদি অন্য কোন ব্যক্তির সঙ্গে এই সমস্যাগুলি এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন তাহলে সেটা সহায়ক হবে ।

যখন একজনকে বন্ধুবান্ধবেরা এবং আত্মীয় স্বজনেরা সাহায্য করছেন, তখন আপনাকে অবঙ্যই এটা দেখতে হবে যে, অসুস্থতার জন্য তাদেরকে দোষ না দিতে অথবা ‘নিজেকে ঠিক কর’ এই কথা না বলতে । তারা সম্ভবত নিজেদেরকে দোষ দিচ্ছেনই এবং আপনি যদি তাদের সমালোচনা করেন, তাহলে তারা হয়ত আরও বেশী মানসিক চাপে ভুগবেন । প্রশংসা করা সমালোচনার থেকে বেশী কার্যকরী । আপনার তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য কিছু করা সম্ভব । কিন্তু এটা করতে হবে ভালবেসে এবং সহানুভূতি দেখিয়ে ।

এটা উল্লেখযোগ্য যে আপনি আপনার নিজের প্রয়োজনের দিকে নজর দেন । যদি পারেন তাহলে যত বেশী সম্ভব বন্ধুবান্ধবদের এবং আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে এই দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিন । যে সকল ব্যক্তিদের সঙ্গে আপনার রাগ বা হতাশা নিয়ে কথা বলতে পারবেন তাদের খুজে বের করুন । আপনি যে অবস্থায় পড়েছেন সেই ধরনের ব্যক্তিদের জন্য হয়ত স্থানীয় সাহায্যকারী দল থাকতে পারে ।

ক্রাইসিসের টেলিফোন কাউন্সেলিং ব্যবস্থায়, বাচ্চাদের,অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের যারা মানসিক চাপগ্রস্থ তাদের কাউন্সেলিং দিয়ে থাকে । এ ছাড়াও সারা দেশে বয়স্কদের জন্য মুখামূখি কাউন্সেলিং, অন্যান্য সংস্থার এবং দলের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকে ।

আপনার নিকটস্থ মাইন্ড এসোসিয়েশন এবং অন্যান্য স্থানীয় সেবাব্যবস্থার তথ্য জানবার জন্য মাইন্ড হেল্পলাইন, মাইন্ডইনফোলাইন 0845 7660 163 তে সোমবার থেকে শুক্রবার বেলা 9.15মি: - 5.15মি: এর মধ্যে ফোন করুন ।

ব্যখ্যা: মাইন্ডইনফোলাইনরে ল্যাজ্ঞুয়েজ লাইনের সাহায্যে 100টা ভাষায় কথা বলার সুবিধা আছে । যে সকল ব্যক্তির কথা বলার বা কানে শোনার অসুবিধা আছে, তাদের যদি মিনিকম থেকে থাকে তাহলে তারা আমাদের সঙ্গে ‘টাইপটক’ করতে পারবেন । টাইপটক লাইনের নম্বর হল 0800 959598 । ফেক্স নম্বর: 0151 709 8119 ।

স্কটিশ এসোসিয়েশন ফর মেন্টাল হেল্থ । টেলিফোন নম্বর: 0141 568 7000

নর্দান আয়ারল্যান্ড এসোসিয়েশন ফর মেন্টাল হেল্থ টেলিফোন নম্বর: 02890 328474

প্রত্যেক মানুষ যাদের মানসিক রোগের অভিজ্ঞতা হয়েছে

মাইন্ড

তাদের জীবন ভাল করার জন্য কাজ করে ।

www.multikulti.org.uk