একটোপিক প্রেগনেন্সি / জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন
Ectopic Pregnancy
জরায়ুর বাইরে গর্ভধারন কোন একটা অসাধারন ঘটনা নয়। প্রতি ১০০টার মধ্যে একটা গর্ভধারন জরায়ুর বাইরে হয় এবং এই অবস্থায় জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে। যখন গর্ভাধান ডিম্ব জরায়ুর গহ্বরের ভিতরে না গিয়ে বাইরে (সাধারনত ফেলোপিয়ান টিউবের ভিতর) হয় তখন এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। গর্ভধারন যখন বড় হতে থাকে তখন ব্যথা এবং রক্তপাত আরম্ভ হতে থাকে। এই অবস্থায় যদি দ্রুত চিকিত্সা করা না হয় তাহলে এই টিউব ফেটে যেতে পারে এবং পেটের ভিতর রক্তপাত হতে পারে, যার ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে মৃত্যু পর্য্যন্ত হতে পারে।
জরায়ুর গহ্বরের বাইরের গর্ভাবস্থা/একটোপিক পেগনান্সি হওয়ার কারন কি?
গর্ভাধান হওয়ার পর ডিম্ব সাধারনত ৪-৫ দিন ফেলোপিয়ান টিউবের ভেতর দিয়ে ভ্রমন করে জরায়ুতে এসে পৌছায়। সেখানে গর্ভাধান হওয়ার ৬-৭ দিন পর এই ডিম্ব জরায়ুর গহ্বরের ভিতর স্থাপিত হয়। এটা হওয়ার সবচাইতে সাধারন কারন হল ফেলোপিয়ান টিউবের কোন ক্ষত, যার ফলে টিউবের ভিতর কোন রকমের বাধার সৃষ্টি হতে পারে অথবা টিউব সরু হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া টিউবের দেয়ালেও কোন রকম সমস্যা থাকতে পারে। টিউবের দেয়াল সাধারনত সঙ্কোচনের দ্বারা এই ডিম্বকে জরায়ুর গহ্বরের ভিতর ঠেলে দেয়। এপেনডিসাইটিস অথবা শ্রোণীতে/পেলভিকে কোন ইনফেকশনের ফলে এই টিউব মুচড়ে যেতে পারে অথবা টিউবের ভিতরটা আঠালো হয়ে যেতে পারে। এর ফলে এই গর্ভাধান ডিম্বের যাত্রা বিলম্বিত হয়ে এই ডিম্ব টিউবের ভিতরে আটকে গিয়ে সেখানেই স্থাপিত হয়ে পড়ে। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কোন কারনে এই ডিম্ব টিউবের ভেতরে স্থাপিত হয় সেটা জানা যায় না।
সম্ভবত ফলাফল কি হতে পারে?
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই জরায়ুর বাইরের গর্ভধারন নিয়মিত মাসিকের সময়ের আগেই নষ্ট হয়ে যায় এবং সেটা শরীরের ভিতর মিশে যায়। কখনও কখনও অল্প সল্প ব্যথা এবং রক্তপাত হতে পারে। এই সকল ক্ষেত্রে জরায়ুর গহ্বরের বাইরের গর্ভাবস্থা খুব কম সময়ই সনাক্ত করা যায় এবং মনে করা হয় যে গর্ভপাত হয়েছে। এরকম হলে সেখানে করার কিছু থাকে না
যদি টিউবের ভেতরের এই গর্ভধারন বেঁচে থাকে তাহলে টিউবের পাতলা দেয়ালে টান পড়তে থাকে এবং তার ফলে তলপেটে ব্যথা আরম্ভ হয়। এই সময়ে হয়ত যোনিতেও রক্তপাত হতে পারে। গর্ভধারন যখন বড় হতে থাকে তখন এই টিউবে ফাটল ধরতে পারে এবং এর ফলে পেটে প্রচন্ড ব্যথা এবং রক্তপাত হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলা আকষ্মিকভাবে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।
এরকম হওয়ার আগেই হয়ত জরায়ুর গহ্বরের বাইরের গর্ভাবস্থা রক্ত পরীক্ষার দ্বারা সনাক্ত করা যেতে পারে। এই পরীক্ষাতে এটা দেখা যায় যে স্বাভাবিক গর্ভধারনের ফলে, শরীরের গর্ভধারন রসের/হরমোনের যতটা তাড়াতাড়ি পরিবর্ত্তন হওয়ার কথা, সেট হয় না।
লক্ষনগুলি কি?
গর্ভধারন করার মত বয়সের যে কোন মহিলা যিনি নিয়মিতভাবে যৌন সঙ্গম করে থাকেন, তার যদি তলপেটে ব্যথা হয় তাহলে এটা সন্দেহ করা হয় যে তার জরায়ুর বাইরের গর্ভধারন হয়েছে। এই পেটের ব্যথা হটাত্ আরম্ভ হতে পারে এবং সেই সঙ্গে যৌননালী থেকে হয়ত রক্তপাত হতে পারে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভধারনের ৪র্থ থেকে ১০ম সপ্তাহের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষ্মনগুলি দেখা যায়।
- পেটের একদিকে ব্যথা
এই ব্যথা সমানে চলতে পারে এবং খুব বেশী হতে পারে। তবে পেটের যে দিকে জরায়ুর বাইরের গর্ভধারন হয়েছে সেই দিকে এই ব্যথা নাও হতে পারে
- কাঁধের উপরের দিকে ব্যথা
আভ্যন্তরিন রক্তপাতের ফলে বুক এবং পেটের মাঝখানে পেশীর যে পাতলা পর্দা, যাকে বলা হয় ডায়াফ্রাম, সেখানে অস্বস্তির ফলে এই ব্যথা হতে পারে।
- গর্ভধারনের পরীক্ষা
এই পরীক্ষাতে আপনার গর্ভধারন হয়ত ধরা পড়তে পারে, তবে সবসময় ধরা পড়ে না। এই ধরনের গর্ভধারন স্থির করবার জন্য কখনও কখনও বিশেষ ধরনের রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
- অস্বাভাবিক রক্তপাত
একজন মহিলা হয়ত জানেন না যে তিনি সন্তান সম্ভবা। তবে তার অস্বাভাবিক ধরনের মাসিক হতে পারে। তার হয়ত কয়েল লাগানো আছে। তার মাসিকের রক্তপাত সাধারন অবস্থা থেকে বেশী বা কম হতে পারে এবং সাধারন সময়ের থেকে বেশী সময় ধরে হতে পারে। সাধারন মাসিকের থেকে এই রক্তের রং গাড় এবং এটা জলের মত পাতলা। অনেক সময় এটাকে প্রুনের (শুকনা প্লাম) রস বলে বর্ননা করা হয়।
- মাসিক না হওয়া অথবা দেরীতে হওয়া
হয়ত মনে হবে যে গর্ভধারন হয়েছে এবং তার সব লক্ষ্মন দেখা যাচ্ছে, যেমন - বমি বমি ভাব, স্তনে ব্যথা অথবা পেট ফোলা, কিন্তু কোন রক্তপাত হচ্ছে না
- মল মূত্রের সমস্যা
পায়খানা এবং পেচ্ছাব করার সময় যন্ত্রনা
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
আপনার হয়ত মাথা ঘুরতে পারে অথবা মনে হতে পারে যে অজ্ঞান হয়ে যাবেন। সেইসঙ্গে মনে হবে যে আপনার শরীরের ভিতর খুব খারাপ কিছু হচ্ছে। অন্যান্য লক্ষ্মনগুলি হল, যেমন - ফ্যকাশে হয়ে যাওয়া, নাড়ীর গতি দ্রুত হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া, পেট খারাপ হওয়া এবং রক্তের চাপ/ব্লাড প্রেসারও কমে যেতে পারে।
এটা কি ভাবে সামলানো যায়?
যদি কোন মহিলার সন্দেহ হয় যে তার জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন হয়েছে, তাহলে তার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়া উচিত্। সেখানে তার আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করে তিনি সন্তান সম্ভবা কি না সেটা পরীক্ষা করে দেখা হবে। স্ক্যানে যদি দেখা যায় যে জরায়ুর গহ্বর খালি, কিন্তু তিনি সন্তান সম্ভবা, তাহলে এটা সম্ভব যে তার জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন হয়েছে। যদিও এটাও সম্ভব যে গর্ভাবস্থার এটা প্রথম অবস্থা অথবা গর্ভপাত হয়েছে। যোনীর ভিতরে যন্ত্র ঢুকিয়ে সবচাইতে ভাল আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করলেও সব সময় জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন সেই স্ক্যানে দেখা সম্ভব হয় না। যদি মহিলার শরীর ভাল থাকে এবং তিনি খুব বেশী ব্যথায় না ভোগেন তাহলে হয়ত দুই তিন দিন ধরে তার রক্তের রাসায়নিক রস/হরমোন পরীক্ষা করে তার জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন হয়েছে কি না সেটা নিশ্চিত করা হবে। যদি ঘোর সন্দেহ থাকে যে মহিলার জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন হয়েছে অথবা তার শারীরিক অবস্থার লক্ষ্মনগুলি খারাপের দিকে যাচ্ছে তাহলে ল্যাপারোস্কোপি (একটা টিউবের মত যন্ত্র ঢুকিয়ে শরীরেন ভিতরের দিক পরীক্ষা করা) করে ফেলোপিয়ান টিউব পরীক্ষা করে দেখা হবে। তবে সম্ভবত পেটের অপারেশন করে এই জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভাবস্থাকে সরানোর প্রয়োজন পড়বে এবং রক্তপাতের জন্য তাকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
ফেলোপিয়ান টিউবে ফাটল ধরার আগে প্রথম অবস্থাতেই যদি এটা ধরা পড়ে এবং উপযুক্ত চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে ভেতরে যন্ত্র ঢুকিয়ে চিকিত্সার প্রয়োজন কম হবে। ছোট গর্ত / কি-হোল অপারেশন করলে বা ঔষধের দ্বারা চিকিত্সা করলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠার সম্ভাবনা থাকে এবং ভবিষ্যতে আরেকবার গর্ভধারনের বেশী সম্ভাবনা থাকে। মনে রাখবেন যদি জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন হয়ে থাকে, তাহলে সর্ব্বদাই সেটাকে নষ্ট করতে হবে। উপরোক্ত চিকিত্সাগুলির দ্বারা একজন মহিলার শারীরিক ক্ষতি যতটা সম্ভব কম হয় সেটা নিশ্চিত করা হবে।
- ফেলোপিয়ান টিউবে ফাটল ধরার আগেই ডাক্তার ল্যাপারোস্কোপির (একটা টিউবের মত যন্ত্র) দ্বারা টিউবটি কেটে এই গর্ভাধানটিকে সরানো এবং টিউবটিকে অক্ষত রাখা।
- অন্যথায়, মেথোট্রেকসেট ওষুধ, যেটা গর্ভধানকে নষ্ট করে, সেই ওষুধ ব্যবহার করে এই গর্ভাবস্থাকে নষ্ট করে ফেলা হবে। হয় আলট্রাসাউন্ড করার সময়ে, অথবা ল্যাপারোস্কোপি করার সময়ে সোজাসুজি একটা ইনজেকশন দ্বারা এই ওষুধটি ঢুকিয়ে দিয়ে গর্ভাধানকে নষ্ট করে দেওয়া হবে, অথবা কোন একটা পেশীতে ইনজেকশন দেওয়া হবে এবং সেখান থেকে এই ঔযুধ রক্তের সঙ্গে মিশে জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভাধানে পৌছে সেটাকে নষ্ট করে দেবে। উপরোক্ত প্রক্রিয়াগুলির দ্বারা ফেলোপিয়ান টিউবের কোনরকম ক্ষতি হওয়াটাকে এড়ানো যাবে।
স্বাভাবিকভাবেই আধুনিক চিকিত্সা পদ্ধতি নির্ভর করে দক্ষ অপারেশনের ডাক্তারের/সার্জেনের, ভাল আলট্রাসাউন্ডের স্ক্যান এবং কার্যকরী রসায়নাগার/লেবোরেটরির পরীক্ষার উপর। এ ছাড়াও এই পদ্ধতিগুলি এখনও সব জায়গায় পাওয়া যায় না এবং এইগুলি সম্বন্ধে এখনও অনেক রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং অদল বদল চলছে।
কার এরকম হবার সম্ভাবনা আছে?
যে কোন মহিলা যার এখনও গর্ভধারন করার বয়স আছে এবং তিনি নিয়মিত যৌন সঙ্গম করে থাকেন, তারই এই জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন হবার ঝুঁকি থাকে। যদি আপনার নিম্নলিখিতগুলি থেকে থাকে তাহলে জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে:
- শ্রোণীর/পেলভিকের উত্তেজক/ইনফ্ল্যামাটোরি অসুখ
- যদি অতীতে ফেলোপিয়ান টিউবে কোন ইনফেকশনের জন্য শ্রোণীতে/পেলভিকে কোন উত্তেজক/ইনফ্ল্যামাটোরি অসুখ হয়ে থাকে (যেমন: ক্লামাডিয়া, ট্র্যাকোমাটিস - সাধারন যৌন সংক্রামক অসুখ এবং এগুলির কোন লক্ষ্মন হয়ত বাইরে থেকে বোঝা যায় না)। ক্লামাডিয়া সম্বন্ধে আরও খোজ খবর নিন।
- এন্ডোমেট্রিওসিস
আগে, পেটের যে কোন অপারেশন, যেমন - সিজারিয়ান অপারেশনের দ্বারা সন্তান প্রসব, এ়পেনডিক্স অপারেশন অথবা জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন, হয়ে থাকলে এই বিপদের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- কয়েল (coil / IUCD) লাগানো
কয়েল লাগানো হলে জরায়ুতে গর্ভধারন আটকানো যায়, কিন্তু ফেলোপিয়ান টিউবে গর্ভধারনের জন্য এই ব্যবস্থা কম কার্যকরী।
- আপনি যদি গর্ভধারন আটকানোর জন্য, নিয়মিতভাবে প্রযেষটেরোন (ছোট পিল) খান
এটা হচ্ছে একমাত্র পিল যেটা টিউবের স্বাভাবিক চলনশক্তি বদলে দেয়, এবং এই পিলকে জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারনের অবস্থা কিছুটা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়।
ভবিষ্যতের গর্ভধারন?
একজন মহিলার যদি দুইটা ফেলোপিয়ান টিউবের একটা ফেটে যায় অথবা সেটাকে কেটে বাদ দেওয়া হয়, তাহলেও তিনি আগের মতই ডিম্ব উত্পাদন করবেন, তবে তার গর্ভধারনের ক্ষমতা শতকরা ৫০% ভাগের মত কমে যাবে।
আরেকবার জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারনের সম্ভাবনা শতকরা ৭% থেকে ১০% পর্য্যন্ত এবং এটা নির্ভর করে কি ধরনের অপারেশন হয়েছে এবং অন্য যে ফেলোপিয়ান টিউবটি বা টিউবগুলি রয়েছে সেটা বা সেগুলির কতটা ক্ষতি হয়েছে তার উপর। যখন একটা ফেলোপিয়ান টিউব নষ্ট হয়ে যায় (যেমন এর দেয়ালটা আটকে যায়, তখন অন্য টিউবটারও হয়ত ক্ষতি হওয়ার বেশী আশঙ্কা থাকে। এর মানে কেবলমাত্র এই নয় যে গর্ভধারনের সম্ভাবনা স্বাভাবিক অবস্থা থেকে কম, আরেকবার জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারনের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। মনে করা হয় যে, যে সকল ক্ষেত্রে কয়েল
( coil / IUCD ) ব্যবহার করা হয়, সেই সব ক্ষেত্রে যদি এই কয়েল বের করে নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন আশঙ্কা অতটা বাড়ে না।
আবার যখন আমার গর্ভধারন হবে তখন আমি কি করব?
যখন একজন মহিলার একবার জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন হয়েছে, তার যদি মনে হয় যে তিনি আবার সন্তান সম্ভবা, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত্, যাতে তার অবস্থার উপর সব সময় নজর রাখা যায়। ঠিক এই ভাবেই যদি মাসিক হতে দেরী হয়, মাসিকের রক্তক্ষরন স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অন্যরকম হয়, অথবা যদি পেটে অস্বাভাবিক ধরনের ব্যথা হয়; তাহলে তার ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য অনুরোধ করা উচিত্। যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে ডাক্তারকে তার আগের জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারনের ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিতে হবে।
আপনার আবেগগুলি
জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারন একটা বিধ্বস্তকারী অভিজ্ঞতা: সম্ভবত একই সময়ে আপনি একটা বড় অপারেশন থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন, গর্ভের সন্তান হারানোর দুঃখ সামলাচ্ছেন, এবং প্রায় ক্ষেত্রেই এর সঙ্গে আবার গর্ভধারন করার সম্ভাবনাকে মেনে নিতে হচ্ছে। আসলে আপনি হয়ত জানতেনই না যে আপনি সন্তান সম্ভবা।
এই ক্ষতির পর কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস ধরে আপনার আবেগের অনেক পরিবর্ত্তন হতে পারে। ব্যথার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে আপনার হয়ত মনে হচ্ছে যে আপনি মুক্তি পেয়েছেন এবং বেঁচে থাকার জন্য সত্যিই কৃতজ্ঞ; তবে একই সময়ে আপনার গর্ভ নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য হয়ত খুবই মনকষ্টে ভুগছেন। এটা সম্ভব যে মানসিকভাবে এই অবস্থার সঙ্গে সমঝোতা করার আগেই আপনাকে অপারেশনের জন্য যেতে হয়েছে। যে সব ঘটনা হয়েছে সেগুলি ছিল আপনার নিয়ন্ত্রনের বাইরে এবং এর ফলে প্রচন্ড মানসিক ধাক্কা খেয়েছেন।
এই ঘটনা ঘটার কোন সঠিক কারন যদি ডাক্তারী পরীক্ষায় খুজে না পাওয়া যায়, তাহলে কেন এরকম হল স্বাভাবিক ভাবেই আপনি তার কারন খুজে বের করার চেষ্টা করবেন এবং হয়ত নিজেকে দোষী মনে করবেন। যদিও এরকম বোধ করা খুবই স্বাভাবিক, তাহলেও এটা বোঝা উল্লেখযোগ্য যে এই ঘটনা ঘটার ব্যপারে আপনার কোন দোষ নেই।
আপনার গর্ভধারন হটাত্ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে, আপনার শরীরের রাসায়নিক রসগুলি/হরমোনগুলি বিশৃঙ্খল হয়ে গেছে এবং এর ফলে আপনি মন খারাপ/ডিপ্রেশনে ভুগতে পারেন এবং আপনি হয়ত খুবই আহত বোধ করছেন।
আপনার গর্ভাবস্থা আকষ্মিকভাবে শেষ হয়ে যাওয়ার এবং একই সঙ্গে এবং একটা বড় অপারেশন থেকে সুস্থ হয়ে উঠার ফলে আপনার পরিবারের সকলের উপর যে প্রচন্ড মানসিক চাপের এবং ঝামেলার সৃষ্ঠি হয় সেটা বোঝা কিছু কঠিন নয়।
আপনার স্বামীর/সঙ্গীর আবেগগুলি
জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারনের প্রতিক্রিয়া আপনাদের সম্পর্কের উপর প্রচন্ড মানসিক চাপের সৃষ্ঠি করতে পারে। এই অভিজ্ঞতার ফলে আপনাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ট হতে পারে, বা এমনও হতে পারে যে আপনার সেই সময়কার আবেগ বা অনুভূতিগুলি আপনার স্বামী বা সঙ্গী কোনভাবেই বুঝতে পারেন না বা আপনাকে কোনরকম সহায়তা করতে পারেন না।
অনেক পুরুষ তাদের আবেগ বা অনুভূতিগুলি প্রকাশ করতে অক্ষম এবং মনে করেন যে তারা আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন না, তবে মনে রাখবেন যে তিনিও এই মানসিক চাপে ভুগছেন। নিঃসন্দেহে আপনি যাতে ভাল হয়ে উঠেন সেটাই তার প্রধান ভাবনা সেইজন্য তিনি হয়ত মনে করেন যে আপনার জন্য তাকে শক্ত হয়ে থাকতে হবে এবং তার আবেগ এবং অনুভূতিগুলিকে প্রকাশ করা ঠিক হবে না। তবে বর্ত্তমান সমাজে এটা মেনে নেওয়া হয় যে আপনি পুরুষ বা মহিলা যেই হোন না কেন, প্রত্যেকেরই আবেগ প্রকাশ করা স্বাভাবিক এবং আপনার সঙ্গী যাতে তার অনুভূতিগুলি প্রকাশ করতে সক্ষম হন এবং শোক প্রকাশ করতে পারেন, সেই ব্যপারে তাকে আপনার উত্সাহিত করা উচিত্।
ভবিষ্যত্
আরেকবার গর্ভধারনের চেষ্টা করার আগে আপনি যাতে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন তার জন্য নিজেকে সময় দেওয়া উচিত্। ডাক্তারদের পরামর্শ হল যে আপনার শরীর সম্পূর্নভাবে সারবার জন্য অন্তত তিন মাস সময়ের প্রয়োজন। জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারনের অভিজ্ঞতার পর বিভিন্ন মহিলারা বিভিন্ন রকমের আবেগ এবং অনুভূতি বোধ করতে পারেন: কোন কোন মহিলা সঙ্গে সঙ্গেই আবার গর্ভধারন করতে চান, যখন অন্য মহিলারা আরেকবার গর্ভবতী হওয়ার, এই দুঃশ্চিন্তাকর গর্ভাবস্থা এবং এর ফলে মানসিক চাপের ভিতর দিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারেন না।
এটা মনে রাখা অত্যন্ত উল্ল্যেখযোগ্য যে যদিও আরেকবার জরায়ুর গহ্বরের বাইরে গর্ভধারনের সম্ভাবনা ভীতিকর হতে পারে, কিন্তু পরের বার আপনার স্বাভাবিক গর্ভধারনের সম্ভাবনা অনেক বেশী।
আরও তথ্য এবং উপদেশের জন্য নীচের ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।
টিনা জোনস
একটোপিক প্রেগনান্সি ট্রাস্ট
ম্যাটারনিটি ইউনিট, হিলিংডন হসপিটাল
পিয়েল্ড হিথ রোড
আক্সব্রিজ, মিডলসেক্স ইউ বি৮ ৩এন এন
টেলিফোন: ০১৮৯৫ ২৩৮০২৫
Ectopic Pregnancy Trust
Maternity Unit, Hillingdon Hospital
Pield Heath Road
Uxbridge, Middlesex UB8 3NN
Tel: 01895 238025
This document was provided by The Ectopic Pregnancy Trust, 2004. www.ectopic.org,
Document Links
- www.ectopic.org
-
The Ectopic pregnancy Trust web site
http://www.ectopic.org